মাদককে না বলি

পৃথিবীতে জন্ম নেবার পর হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে মানুষ বড় হয়। বড় হয়ে ওঠার মাঝেই অনেক শিশুর পরিবর্তনও লক্ষণীয়। লক্ষ্য করা যায় শিশুরা ১৫ থেকে ১৮ মাস বয়সেই কিছু বুঝেতে পারে। এ সময় শিশুকে কিছু জিজ্ঞেস করলে শিশু মাথা নেড়ে জবাব দেয় । এভাবে এক সময় শৈশব থেকে কৈশোর, কৈশোর থেকে যুবক। তারপর বৃদ্ধ হয়ে চলে যাবার পালা, মানে মৃত্যু। এভাবেই চলে আসছে স্রষ্টার প্রকৃত নিয়ম। এই নিয়মের ব্যতিক্রম কোনও দিন হয়নি, আর হবেও না। এই নিয়মের মাপকাঠিতেই মানুষের বেঁচে থাকতে হয়। আর কর্মফলের ওপর নির্ভর করেই মানুষের কর্মফল ভোগ করতে হয়। কর্ম ভালো তো সুখ, কর্ম খারাপ তো দুখ।

Tottho Upatto

বেঁচে থাকার মাঝেই মানুষ জড়িয়ে পড়ে কেউ সুকর্মে, কেউ আবার কুকর্মে। কর্ম গুনে কেউ হয় বাবুর্চি, কেউ আবার হয় হিরোইনচি। হিরোইনচি বলা হয় একজন নেশাখোর মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে। তাহলে ইয়াবা সেবনকারীকে লোকে কী বলে? তাকে বলা হয় বাবাখোর। ইয়াবা হলো বাবা, যে সেবন করে সে-হলো খোর, সব মিলিয়ে বাবাখোর। ইয়াবা হল বর্তমান যুগের মাদকদ্রব্য নেশাজাতীয় ট্যাবলেট। এটি আসে পার্শ্ববর্তী কোনও এক দেশ থেকে। এই ইয়া বাবা (ইয়াবা) এখন গোটা দেশটাকেই গ্রাস করে ফেলেছে ক্রমাগতভাবে।

মাদক এখন বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের অন্যতম একটি মারাত্মক সমস্যা। মাদকাসক্ত সমাজ জাতির পঙ্গুত্ব বরণের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে শহর ছাড়িয়ে এই মাদক পাড়াগাঁয়েও পৌঁছে গেছে। দেশের ৬৮ হাজার গ্রামের সব গ্রামেই পাওয়া যায় মাদকদ্রব্য। এমন একটি গ্রাম খুঁজে পাওয়া যাবে না যে, এই গ্রামে মাদকাসক্ত ব্যক্তি নেই। এসব মাদক সেবনকারী ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হল ‘ইয়াবা’ সেবনকারী ।

মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে যেমন কর্মক্ষম লোকেরা কর্মক্ষমতা হারায় তেমনি তাদের মানসিক বৈকল্যতার সৃষ্টি হয়। তারা নানা রকমের স্নায়ুবিক দুরারোগ্য সমস্যায় নিপতিত হয়। তখন তার দ্বারা সমাজের কোন উন্নতি আশা করা যায় না। এমনকি তারা তাদের জীবনের বিশ্বাসটুকু হারিয়ে ফেলে। মাদকদ্রব্য সেবনকারীরা সমাজে নানাবিদ সমস্যা সৃষ্টি করে। যেমন- চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই, খুন প্রভৃতির মত কাজে লিপ্ত হয়ে সমাজকে করে তোলে বিষাক্ত।
একটি দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব যেন সমূলে ধ্বংস হয় এবং নৈতিকতার পতন ঘটে সেই লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রও তৎপর।
মাদকদ্রব্য সমলে বিনষ্ট করা সম্ভব নয় কিন্তু মাদক সেবনকারীদেরকে আত্মসংশোধনের মাধ্যমে কিছুটা হলেও সুপথে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে যেমন- কর্মক্ষমতা কে বিনষ্ট করে, মাদকদ্রব্য সেবনে মানবিক বোধ নষ্ট হয় প্রভৃতি নীতিবাক্য লিফলেট আকারে জনসমক্ষে প্রদর্শিত করার ব্যবস্থা করা।
২/ প্রচার মাধ্যম গুলোতে এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান তৈরি করা।
৩/ মাদকদ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।
৪/ চোরা চালানকারী রোধ করার জন্য সীমান্তে নিরাপত্তা বাহিনীকে আরো শক্তিশালী করা।
৫/ পুলিশ এনফর্সমেন্ট বিভাগের অধীনে মাদক সেবাকারীদের বিচারের ব্যবস্থা করা এবং পুলিশ সদস্য কর্তৃক সহযোগিতা কারীদেরকেও বিভাগীয় শাস্তির বিধান জোরদার করা।

উপরোক্ত বিষয়াদি সঠিকভাবে পরিচালিত করতে পারলে হয়তো মাদক নির্মূল করে সুন্দর সমাজ গঠন করা সম্ভব হবে। সর্বোপরি গণসচেতনতা বৃদ্ধি করে আমাদের নিজেদের নতুন প্রজন্মকে সুরক্ষিত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। আর তা না হলে ভয়ংকর অমানিশার জাতি নিপতিত হবে। তাই আমাদের স্লোগান হবে- আমরা সবাই মাদককে না বলি।